আমের ফল ঝরা রোধে করণীয় সহজ টিপস-এখনই জানুন ফল ঝরা বন্ধের গোপন কৌশল
আমের ফল ঝরা রোধে করণীয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি আপনার। যেহেতু আপনি আমের মুকুল থেকে ফল আসার পর কিভাবে পরিচর্যা করবেন এবং যত্ন নিবেন। এই সমস্ত ব্যাপারে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিবো। বিশেষ করে আম চাষিরা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে মোকাবেলা করতে হয়। তার মধ্যে আছে আমের ফল ঝরে যায়।
গাছে ফল আসার পরে এমন বিভিন্ন সমস্যা থাকে,যার কারণে ফল ঝরে যায়।এবং কি সমস্যায় ফল ঝরে যায়।সে সমস্যা আর্টিকেল এর মধ্যে তুলে ধরছি, আমের ফল সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।তাহলেই আমের পরিচর্যা সঠিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আমের ফল ঝরা রোধে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- আমের ফল ঝরা রোধে করণীয়
- আমের ফল ঝরার কারণ
- আম গাছের পরিচর্যা
- আম গাছে সার প্রয়োগের পরিমান
- আমের মুকুল আসার পর করনীয়
- আম গাছে স্প্রে করার নিয়ম
- আমের মুকুলের ঔষধ
- আম গাছে সার প্রয়োগের সময়
- লেখক এর কথাঃ আমের ফল ঝরা রোধে করণীয়
আমের ফল ঝরা রোধে করণীয়
আমের ফল ঝরা রোধে করণীয় সম্পর্কে বিশেষ করে যাদের বাড়িতে এবং আম চাষ করছে তাদের জানা অত্যন্ত জরুরী। আম হচ্ছে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। আমের মুকুল আসার পর থেকে পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হবে তা না হলে আমের ফল সব নষ্ট হয়ে যাবে। আম গাছে সঠিক সময়ে সার এবং সেচ পোকামাকড় মারা ওষধ রোগ বালাই এই সমস্ত ব্যাপারে সঠিক সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা যাবে না। এতে আমের ফুল এবং ফল মারাত্মক ক্ষতি হবে।
আরোও পড়ুনঃ বোরো ধানের আধুনিক চাষ পদ্ধতি বেশি ফলনের সহজ উপায়
তবে দেখা যায় অনেক সময় আম গাছের ফল আগেভাগেই ঝরে পড়ে এতে চাষীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। বিভিন্ন পরিবেশ কত পুষ্টিগত এবং কীটনাশক সংক্রান্ত কারণে আমের ফল ঝরে যেতে পারে। আমের ফল ঝরা রোদে কার্যকরী কিছু পদ্ধতি আপনার মাঝে শেয়ার করলাম। যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে আমের ফল ঝরা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কার্যকারী পদ্ধতি গুলো।
সঠিক পরিমাণে পানি সরবরাহ করাঃ
- আম গাছে বৃদ্ধি এবং ফল সংরক্ষন পর্যন্ত পরিমাণ মত পানি সরবরাহ করতে হবে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে সপ্তাহে অন্তত ১বার পানি সেচ দেওয়া জরুরী। অতিরিক্ত পানি জমে গেলে শিকড় পৌঁছে যেতে পারে।তাই পানির নিকেশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সার ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা করতে হবেঃ
- প্রতি বছর আম গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ফসফরাস এবং পটাশিয়াম যুক্ত সার প্রয়োগ করতে হবে।
- ফল গঠনের সময় বরণ ও ক্যালসিয়াম সমুদ্র সার ব্যবহার করলে ফল ধরা কমে যাবে।
- জৈব সার ব্যবহারে গাছের মাটি রোববারতা বাড়ে এবং ফল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই দমন করাঃ
- পোকামাকড় দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে কপার অক্সিক্লোরাইড ও সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলে ভালো হয়
- গাছের আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পোকামাকড়ের বংশবিস্তার না হতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষাঃ
- গাছের চারপাশে বায়ুরোধী জাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- তীব্র গরম আবহাওয়া সময় পানি স্প্রে করতে হবে।
- আমের ফল ঝরা রোধে কিছু উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারী হরমোন যেমন: NAA (Napthalene Acetic Acid) ও 4-CPA (4-Chlorophenoxyacetic Acid) ব্যবহার করা যাবে। এগুলো ফলের পরিপক্বতা বাড়িয়ে ঝরা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আমের ফল ঝরার কারণ
পরিবেশগত কারণঃ
- অনিয়মিত বৃষ্টি বা অতিরিক্ত খরা।
- অতিরিক্ত তাপমাত্রা।
- ঝড়ো বাতাস।
পুষ্টির অভাবঃ
- মাটিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি না থাকলে ফল ঝরে যেতে পারে।
- বিশেষ করে বরণ ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ফলনের বৃদ্ধি হতে বাঁধা সৃষ্টি করে।
কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইঃ
- বিভিন্ন পোকামাকড় যেমন মেহেগিনি ফল ছিদ্রকারী পোকা ও আমের মাঝারি ফড়িং আমের ফল ঝরার কারণ।
- ছত্রাক জনিত রোগ যেমন অ্যানথ্রাকনোজ ও ডাইব্যাক রোগো ফল ঝরা অন্যতম কারণ হতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ
- গাছের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের অভাব বা অতিরিক্ততা ফল ধরার কারণ হয়।
অতিরিক্ত ফল ধারণঃ
- যদি অতিরিক্ত গাছে অর্থাৎ বেশি সংখ্যক আম ধরে তবে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে কিছু ফল ঝরে যায়।
আম গাছের পরিচর্যা
আম গাছে সার প্রয়োগের পরিমান
আম গাছে সার প্রয়োগের পরিমান সম্পর্কে না জানলে আম গাছের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। শুধু যে সার প্রয়োগ করলেই গাছে ফলন ভালো হবে তা কিন্তু নয়।সার প্রয়োগ করতে হলে অবশ্যই পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।যাতে গাছের কোন ক্ষতি না হয়। আম গাছের সঠিক বৃদ্ধ ফলনের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সার প্রয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিভাবে গাছে সার প্রয়োগ করবেন কতটুক সার প্রয়োগ করলে ভালো হবে। এবং কত বছর বয়সের গাছে কতটুকু সার প্রয়োগ করবেন নিচে টেবিলে বিভিন্ন বয়সের আম গাছের সার ব্যবহারের সঠিক মাত্রা দেওয়া হলো।
গাছের বয়স | গোবর সার (কেজি) | ইউরিয়া (গ্রাম) | টিএসপি (গ্রাম) | এমওপি (গ্রাম) |
---|---|---|---|---|
১ বছর | ১০ | ১০০ | ১০০ | ৭৫ |
২ বছর | ১৫ | ২০০ | ২০০ | ১৫০ |
৩ বছর | ২০ | ৩০০ | ৩০০ | ২২৫ |
৪ বছর | ২৫ | ৪০০ | ৪০০ | ৩০০ |
৫ বছর | ৩০ | ৫০০ | ৫০০ | ৩৭৫ |
৬ বছর ও তদূর্ধ্ব | ৪০-৫০ | ৬০০ | ৬০০ | ৪৫০ |
সার প্রয়োগের নিয়মঃ
- সার বছরে ২-৩ বার ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে (সাধারণত বর্ষার শুরুতে, শীতকালে এবং ফল ধরার আগে)।
- সার প্রয়োগের পর গাছের চারপাশে মাটি ভালোভাবে কোপাতে হবে, যাতে গাছ সহজে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
- সঠিক মাত্রায় পানি সেচ দিলে সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায় এবং গাছ সহজে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
আমের মুকুল আসার পর করনীয়
সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা:
- মুকুল আসার সময় খুব বেশি পানি দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- প্রয়োজন মতো মাটি আর্দ্র রাখা উচিত এবং বিশেষ করে খরার সময় হালকা সেচ দিতে হবে।
সার ও পুষ্টি প্রয়োগ:
- মুকুল আসার সময় প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০-২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ১৫০-২০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে।
- মুকুল সুস্থ রাখার জন্য বোরন ও দস্তা (জিংক) স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।
রোগ ও কীটপতঙ্গ দমন:
- আমের মুকুলে মিলিবাগ, থ্রিপস ও পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ বেশি হয়।
- প্রতিরোধের জন্য নিম তেল বা অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
- ছত্রাকজনিত রোগ রোধে প্রতি ১০-১২ দিন পরপর কপার অক্সিক্লোরাইড বা সালফার স্প্রে করা যেতে পারে।
পরাগায়ন ও ফুলের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ:
- মৌমাছির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কীটনাশকের মাত্রা কম রাখা উচিত, কারণ মৌমাছিরাই পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম।
- মুকুল পর্যায়ে পর্যাপ্ত রোদ ও বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
অতিরিক্ত মুকুল ছাঁটাই:
- গাছে অতিরিক্ত মুকুল হলে ফলের আকার ছোট হতে পারে, তাই হালকা ছাঁটাই করা দরকার।
- প্রতিটি শাখায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মুকুল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিলে গাছের শক্তি সংরক্ষিত থাকে।
গুটি ঝরা রোধ:
- বোরন, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামযুক্ত স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
- ফলের আকার বড় হওয়ার জন্য ৪০-৫০ দিন পর একবার এনএএ (NAA) হরমোন স্প্রে করা যেতে পারে।
মুকুল ফোটার সময় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ:
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা কুয়াশার কারণে মুকুল ঝরে যেতে পারে, তাই প্রয়োজনে হালকা পানি স্প্রে করা যেতে পারে।
- ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছের মুকুল রক্ষা করতে গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে দেওয়া যায়।
আম গাছে স্প্রে করার নিয়ম
আমের মুকুলের ঔষধ
আমের মুকুলের ঔষধ ব্যবহার করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।বিশেষ করে আম গাছে মুকুল আসার পর সঠিক সময়ে ঔষধ স্প্রে করা অত্যন্ত জরুরী। সঠিক সময়ে স্প্রে করলে আম গাছে রোগবালাইও পোকামাকড় আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিভাবে স্প্রে করবেন কোন ঔষধ ব্যবহার করবেন।রোগ প্রতিকারমূলক ওষুধের তালিকা দেয়া হলো।
সমস্যা | ওষুধের নাম | প্রয়োগের সময় | ব্যবহারের হার |
---|---|---|---|
মিলিবাগ ও থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% SL / অ্যাসিটামিপ্রিড ২০% SP | মুকুল আসার আগে ও পরে | প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি |
পাউডারি মিলডিউ রোগ | সালফার ৮০% WG / হেক্সাকোনাজল ৫% SC | মুকুল বের হওয়ার পর | প্রতি লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম |
ব্লাইট ও ছত্রাকজনিত রোগ | কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% WP / ট্রাইডেমরফ ৮০% EC | মুকুল আসার আগে | প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম |
গুটি ঝরা রোধ | এনএএ (NAA) ৪.৫% SL | গুটি বাঁধার সময় | প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি |
মুকুলের পুষ্টি বৃদ্ধি | বোরিক অ্যাসিড + দস্তা সালফেট | মুকুল আসার সময় | প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম বোরন + ২ গ্রাম দস্তা |
পরাগায়ন উন্নতকরণ | জিব্রেলিক অ্যাসিড (GA3) | মুকুল ফোটার সময় | প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি |
স্প্রে করার সঠিক নির্দেশনা:
- মুকুল আসার সময় সকাল বা বিকেলে স্প্রে করলে ভাল হবে।
- স্প্রে করার সময় গাছের পাতার নিচের দিকেও ভালোভাবে প্রয়োগ করাতে হবে।
- ১০-১২ দিন পর পর পুনরায় স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একসাথে মিশিয়ে স্প্রে না করাই সব চাইতে ভালো।
আম গাছে সার প্রয়োগের সময়
সারের ধরন | প্রয়োগের সময় | কারণ |
---|---|---|
জৈব সার (গোবর, কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট) | বর্ষার শেষে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) | গাছের মূল শক্তিশালী করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে |
ইউরিয়া | মুকুল আসার আগে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) ও ফল ধরার পর (মে-জুন) | পাতা ও মুকুল বৃদ্ধিতে সহায়ক |
টিএসপি (ফসফরাস) | বর্ষার পরে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) | মুকুল আসার আগে |
এমওপি (পটাশ) | মুকুল আসার আগে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) এবং গুটি বাঁধার সময় (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) | ফলের আকার বড় ও মজবুত করে |
বোরন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম | মুকুল আসার সময় (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) | গুটি ঝরা রোধ করে ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে |
সার প্রয়োগের নিয়ম:
- সার প্রয়োগের পর গাছের চারপাশে মাটি নরম করে দিতে হবে।
- সার দেওয়ার পর হালকা পানি সেচ দিলে গাছ দ্রুত পুষ্টি গ্রহণ করে।
- গাছের বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
- রাসায়নিক ও জৈব সার একসাথে ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
কিউফুল ওয়েবসাইটতের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url