পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে ফলন দ্বিগুণ করুন
পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।যেহেতু পটল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি, যা সারা বছর চাষ করা সম্ভব। এটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, অনেক কৃষক পটল চাষ করে ফলন পান না।
ফলন না পাওয়ার কারণ হচ্ছে সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতির অভাব। সঠিক প্রযুক্তি ও পরিচর্যার মাধ্যমে পটলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা পটলের ফলন বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করব। এজন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন
- পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়
- মাটি ও আবহাওয়া নির্বাচন করা
- বীজ নির্বাচন ও রোপন পদ্ধতি
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা
- পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনা
- আগাছা ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
- মাচা পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা
- ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- পটল চাষের রোগবালাই ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা
- লেখক এর মন্তব্যঃ পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়
পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়
পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আপনি জানতে চেয়েছিলেন সেহেতু পটলের ফলন বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল আপনার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।পটল একটি জনপ্রিয় সবজি এই সবজি বৎসরে বারোমাসি পাওয়া যায়। আমাদের দেশে প্রায় অধিকাংশ চাষীরা পটল চাষ করে,কিন্তু কেউ কেউ ফসলে লাভবান হয় আবার কেউ কেউ লাভবান হয় না।এর একটাই কারণ সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যার অভাবে পটল লাগানোর আগে থেকেই নিতে হবে, এবং সঠিক সার বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তাছাড়া জমির উবারতা বাড়াতে হবে। সঠিকভাবে জমি চাষ করা না হয়,তাহলে পটলের ফলন বৃদ্ধি পাবে না।
তাছাড়া পটলের ভালো বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে পটলের ফলন বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে। অনেক চাষিরা দেখা যায় পটলের বীজ সংগ্রহ করে অন্য পটলের লতা থেকে।পটলের লটা সংগ্রহ করতে হলে অবশ্যই সেই জাত সম্পর্কে জানতে হবে।যে পটলের ফলন কেমন হয়। আর পটল লাগানো থেকে ধরা অবধি প্রচুর যত্ন করতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ অসময়ে তরমুজ চাষ পদ্ধতি আধুনিক কৌশলে বেশি ফলন এবং লাভ
পটলের ফুল আসলে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে স্প্রে করতে হবে যাতে পোকামাকড় ফুল এবং ফলের আক্রমণ না করতে পারে।যদি প্রতিদিন নিয়মিত স্প্রে না করেন তাহলে পটলের বাম্পার ফলন পাবেন না। কারণ পটল একটি সূক্ষ্ম সবজি যার নিয়মিত পরিচর্যা না করলে। পটলের ফলন বৃদ্ধি হবেনা না। পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আর ও পড়ুন।
মাটি ও আবহাওয়া নির্বাচন করা
মাটি ও আবহাওয়া কোনো অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। মাটি হলো ভূত্বকের উপরের স্তর, যা খনিজ, জৈব পদার্থ, পানি ও বায়ু দ্বারা গঠিত। মাটির ধরন বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে পরিবর্তিত হয়, যেমন আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও জৈব কার্যকলাপ। এটি সাধারণত বেলে, দোআঁশ, এঁটেল ও পলি মাটিতে বিভক্ত। আবহাওয়া বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের স্বল্পকালীন বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকে বোঝায়, যা তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে।
মাটি ও আবহাওয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। শুষ্ক আবহাওয়ায় মাটি কঠিন ও অনুর্বর হয়ে যায়, আবার আর্দ্র আবহাওয়ায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাত বেশি হলে পলি মাটি জমে উর্বরতা বাড়ায়, আর কম বৃষ্টিপাত হলে বেলে মাটি শুকিয়ে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় জৈব পদার্থ দ্রুত পচে মাটিতে পুষ্টি সরবরাহ করে, যা উদ্ভিদের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি বা খরা মাটির গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে। মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। ভালো রাখতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:
- মাটির pH মান ৫.৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায়
- জমির গভীর চাষ দিয়ে আগাছা ও ক্ষতিকর পোকা ধ্বংস করা।
- প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন পচা গোবর ব্যবহার করা।
- চারা রোপণের আগে ১৫-২০ দিন জমি ফেলে রাখা।
- পর্যাপ্ত রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
বীজ নির্বাচন ও রোপন পদ্ধতি
পটলের জনপ্রিয় জাত:
- বারি পটল-১
- বারি পটল-২
- স্থানীয় দেশি জাত
বীজ রোপণের নিয়ম:
- পটল সাধারণত কাটিং বা চারা থেকে রোপণ করা হয়।
- চারা তৈরির জন্য উন্নতমানের গাছ নির্বাচন করা উচিত।
- চারা লাগানোর জন্য ১.৫-২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।
- চারা লাগানোর পর নিয়মিত পানি দিতে হবে।
সঠিক সার ব্যবস্থাপনা
সারের ধরন | পরিমাণ (প্রতি হেক্টর) |
---|---|
জৈব সার (পচা গোবর/কম্পোস্ট) | ১০-১৫ টন |
ইউরিয়া | ১৫০-২০০ কেজি |
টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) | ১০০-১৫০ কেজি |
এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) | ১০০-১২০ কেজি |
গন্ধক | ১৫-২০ কেজি |
সার প্রয়োগের পদ্ধতি:
- জমি তৈরির সময় অর্ধেক টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
- চারা লাগানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
- এরপর ১৫-২০ দিন অন্তর বাকি সার প্রয়োগ করা উচিত।
পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনা
ঋতু | সেচের সময় ও পরিমাণ |
---|---|
গ্রীষ্মকাল | প্রতি ৩-৪ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে |
বর্ষাকাল | অতিরিক্ত পানি যেন জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে |
শীতকাল | প্রতি ৭-১০ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন |
চারা লাগানোর পর | প্রথম ২ সপ্তাহ নিয়মিত হালকা সেচ দেওয়া দরকার |
ফল আসার সময় | পর্যাপ্ত সেচ দিলে ফলনের পরিমাণ বাড়বে |
সেচ পদ্ধতি:
- ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি: শুষ্ক অঞ্চলে কার্যকর, এতে পানি সাশ্রয় হয়।
- ফ্লাড ইরিগেশন: বেশি পরিমাণ জমির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত পানি এড়িয়ে চলতে হবে।
- নালা পদ্ধতিতে সেচ: এতে পানি জমে থাকার সমস্যা কম হয়।
বৃষ্টি বেশি হলে:
- দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- উঁচু বেড পদ্ধতিতে চাষ করলে গাছের গোড়ায় পানি জমবে না।
পরামর্শ:
- অতিরিক্ত সেচ দিলে গোড়া পচা রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তাই পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
- সঠিক সময়ে সেচের মাধ্যমে পটলের গুণগত মান ও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
আগাছা ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
আগাছা দমন:
- প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর আগাছা পরিষ্কার করা উচিত।
- মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আগাছা কমানো যায়।
পোকামাকড় দমন:
- জৈব কীটনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সাধারণত ফল ছিদ্রকারী পোকা, সাদা মাছি ও লাল মাকড় ক্ষতি করে।
রোগবালাই দমন:
- ডাউন মাইলডিউ, পাতায় দাগ রোগ, গোড়া পচা রোগ বেশি দেখা যায়।
- বর্ডো মিশ্রণ, কার্বেনডাজিম ও তামারযুক্ত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মাচা পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
ফল সংগ্রহের নিয়ম:
- সকাল বা বিকেলে পটল সংগ্রহ করা ভালো, এতে ফলের তাজা ভাব বজায় থাকে।
- ২-৩ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করলে ফলন বেশি হয়।
- খুব বেশি শক্ত বা বেশি কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ না করাই ভালো, কারণ এতে বাজারমূল্য কমে যেতে পারে।
- কাটার সময় ফলের গায়ে যেন দাগ না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সংরক্ষণ পদ্ধতি:
- তাজা রাখার উপায়:
- পটল ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত জায়গায় সংরক্ষণ করলে বেশি দিন ভালো থাকে।
- হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে, যাতে আর্দ্রতা বজায় থাকে।
দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ:
- ৮-১০°C তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ৭-১০ দিন ভালো থাকে।
- প্লাস্টিকের বাক্স বা কাঠের বাক্সে পটল সংরক্ষণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
- বেশি দিন সংরক্ষণ করতে চাইলে শীতল ঘরে (Cold Storage) রাখা উত্তম।
পটল চাষের রোগবালাই ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা
সাধারণ রোগ ও প্রতিকার:
রোগের নাম | লক্ষণ | প্রতিকার ও ওষুধ |
---|---|---|
ডাউন মাইলডিউ (Downy Mildew) | পাতায় হলুদ দাগ ও সাদা ছত্রাক | ম্যানকোজেব বা মেটালাক্সিল (২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে) |
গোড়া পচা রোগ (Root Rot) | গাছ ঢলে পড়ে ও শিকড় পচে যায় | কার্বেনডাজিম (২ গ্রাম/লিটার পানিতে স্প্রে) + জমির পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করা |
পাতায় দাগ রোগ (Leaf Spot) | পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ | কপার অক্সিক্লোরাইড (২.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে) |
ফসলের পচন রোগ (Fruit Rot) | ফল পচে যায় ও দাগ পড়ে | কার্বেনডাজিম বা ক্যাপটান (২ গ্রাম/লিটার স্প্রে) |
পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) | পাতায় সাদা গুড়া জাতীয় স্তর | গন্ধকযুক্ত ছত্রাকনাশক (Sulfur fungicide) প্রয়োগ |
সাধারণ কীটপতঙ্গ ও দমন ব্যবস্থা:
কীটপতঙ্গের নাম | ক্ষতির ধরন | প্রতিরোধ ও ওষুধ |
---|---|---|
ডাউন মাইলডিউ (Downy Mildew) | ফলের ভেতরে ঢুকে খেয়ে ফেলে | ফেরোমন ফাঁদ + সাইপারমেথ্রিন (Cypermethrin) স্প্রে |
সাদা মাছি (Whitefly) | পাতার রস শুষে গাছ দুর্বল করে | ইমিডাক্লোরপ্রিড (Imidacloprid) স্প্রে |
লাল মাকড় (Red Mite) | পাতায় হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায় | অ্যাবামেকটিন (Abamectin) স্প্রে |
থ্রিপস (Thrips) | পাতায় দাগ ও কুঁকড়ে যায় | স্পিনোসাড (Spinosad) স্প্রে |
প্রাকৃতিক ও জৈবিক দমন পদ্ধতি:
- নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা।
- নিম তেল বা জৈব কীটনাশক স্প্রে করা।
- ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমন করা।
- ফসলে রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ ব্যবহার করা।
কিউফুল ওয়েবসাইটতের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url