ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত বিস্তারিত জেনে নিন

ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত সেই সমস্ত ব্যাপারে আজকে আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করছি। ল্যাপটপ এখন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিসের কাজ, অনলাইন ক্লাস, ভিডিও এডিটিং, গেমিং কিংবা সাধারণ ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ল্যাপটপ-কেনার-আগে-যেসব-বিষয়-মাথায়-রাখা-উচিত

তবে সঠিক ল্যাপটপ কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, নাহলে পরে পস্তাতে হতে পারে। চলুন জেনে নিই, ল্যাপটপ কেনার সময় গুরুত্বপূর্ণ ৯টি বিষয়। সম্পূর্ণ আর্টিকেল ধৈর্য ধরে পড়ুন তাহলে আপনি সঠিক ডিসিশন নিতে পারবেন ল্যাপটপ কেনার।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত বিস্তারিত জেনে নিন

ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত

ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি ডিভাইস হয়ে উঠেছে। তবে সঠিক ল্যাপটপ নির্বাচন করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন যাতে পরবর্তী সময়ে সমস্যায় না পড়তে হয়।প্রথমেই ঠিক করতে হবে ল্যাপটপটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে। যদি অফিসের সাধারণ কাজের জন্য লাগে, তাহলে মিড-রেঞ্জ কনফিগারেশনই যথেষ্ট। কিন্তু যদি ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক ডিজাইন বা গেমিংয়ের জন্য লাগে। 

তাহলে হাই-কনফিগারেশনের ল্যাপটপ বেছে নেওয়া উচিত। প্রসেসর ল্যাপটপের পারফরম্যান্স নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই ইন্টেল কোর i5/i7 বা AMD Ryzen 5/7 মডেলগুলোর মধ্যে একটি নির্বাচন করা ভালো।র‍্যামের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে, কারণ এটি মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ কাজের জন্য ৮GB র‍্যাম যথেষ্ট হলেও, হাই পারফরম্যান্স কাজের জন্য ১৬GB বা তার বেশি র‍্যাম প্রয়োজন হতে পারে। স্টোরেজের ক্ষেত্রেও এসএসডি (SSD) ও এইচডিডি (HDD) এর মধ্যে পার্থক্য বুঝে নিতে হবে।

এসএসডি দ্রুতগতির হওয়ায় এটি পারফরম্যান্স বাড়িয়ে দেয়, তাই অন্তত ২৫৬GB SSD থাকা ভালো। ডিসপ্লের সাইজ ও রেজোলিউশনও বিবেচনার বিষয়। যদি দীর্ঘ সময় ল্যাপটপে কাজ করতে হয়, তাহলে ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি (FHD) ডিসপ্লে বেছে নেওয়া ভালো। ব্যাটারির ব্যাকআপ কেমন তা খেয়াল করা জরুরি, বিশেষত যারা বাইরে বেশি কাজ করেন তাদের জন্য কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ থাকা দরকার।ল্যাপটপের ওজন এবং পোর্টেবল সুবিধাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। যারা ফ্রিল্যান্সিং বা বাইরে কাজ করেন, তাদের জন্য হালকা ওজনের (১.৫-২ কেজি) ল্যাপটপ ভালো হবে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ IOS 14 এবং IPadOS 14 এ ফুল স্ক্রীন তৈরি করুন খুব সহজে

কীবোর্ডের টাইপিং সুবিধা এবং টাচপ্যাডের কার্যকারিতা কেমন তা যাচাই করে নেওয়া উচিত।সংযোগ ব্যবস্থার দিক থেকেও সতর্ক থাকা দরকার। ইউএসবি টাইপ-সি, এইচডিএমআই, ইথারনেট ও ৩.৫ মিমি অডিও জ্যাকের মতো প্রয়োজনীয় পোর্ট আছে কিনা তা নিশ্চিত করা দরকার। ওয়াইফাই ৬ ও ব্লুটুথ ৫.০ সুবিধা থাকলে আরও ভালো।অপারেটিং সিস্টেমের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উইন্ডোজ, ম্যাকওএস বা লিনাক্সের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত, তা বুঝে নেওয়া দরকার। 

এছাড়া, ল্যাপটপের ব্র্যান্ড এবং ওয়ারেন্টি পলিসিও যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যায় পড়লে সহজে সমাধান পাওয়া যায়।বাজেট অনুযায়ী সেরা কনফিগারেশনের ল্যাপটপ নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যাচাই-বাছাই করে সঠিক ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কেনা উচিত, যাতে এটি দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দিতে পারে। ধাপে ধাপে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ল্যাপটপ কেনার আগে প্রসেসর (CPU) বেছে নিন

ল্যাপটপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রসেসর বা সিপিইউ (CPU)। এটি মূলত ল্যাপটপের মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করে এবং পারফরম্যান্স নির্ধারণ করে। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় সঠিক প্রসেসর নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে, ল্যাপটপটি কী ধরনের কাজে ব্যবহার করবেন। যদি সাধারণ অফিসের কাজ, ওয়েব ব্রাউজিং ও মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দেখার জন্য প্রয়োজন হয়, তাহলে Intel Core i3 বা AMD Ryzen 3 প্রসেসর যথেষ্ট। তবে যদি ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, গেমিং বা ভারী সফটওয়্যার চালানোর পরিকল্পনা থাকে। 

তাহলে Intel Core i5/i7 বা AMD Ryzen 5/7 বেছে নেওয়া ভালো।প্রসেসরের কোর (Core) ও থ্রেড (Thread) সংখ্যা বেশি হলে পারফরম্যান্সও ভালো হয়। উদাহরণস্বরূপ, Intel Core i7 বা AMD Ryzen 7 সাধারণত ৮ কোর ও ১৬ থ্রেডযুক্ত হয়, যা একাধিক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সক্ষম। একইভাবে, প্রসেসরের ঘড়ির গতি (Clock Speed) বা GHz যত বেশি হয়, তত দ্রুত এটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।ল্যাপটপের জন্য লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসর বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

বর্তমানে Intel-এর ১২তম ও ১৩তম জেনারেশন এবং AMD-এর Ryzen ৭০০০ সিরিজের প্রসেসরগুলো বাজারে জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের প্রসেসরগুলো আগের তুলনায় বেশি শক্তিশালী, কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে।যদি আপনি গেমিং বা উচ্চ পারফরম্যান্স নির্ভর কাজ করতে চান, তাহলে H বা HX সিরিজের প্রসেসর বেছে নিতে পারেন, যেমন Intel Core i7-12700H বা AMD Ryzen 7 6800H। 

অন্যদিকে, যদি ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ বেশি প্রয়োজন হয়, তাহলে U সিরিজের প্রসেসর (যেমন Intel Core i5-1235U) ভালো অপশন হতে পারে। আপনার বাজেট অনুযায়ী সেরা পারফরম্যান্সের প্রসেসর নির্বাচন করুন, যাতে ল্যাপটপটি দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবহার করা যায় এবং ভবিষ্যতে আপগ্রেডের প্রয়োজন না হয়।

ল্যাপটপ কেনার আগে র‍্যামের গুরুত্ব 

ল্যাপটপের পারফরম্যান্স নির্ধারণে র‍্যাম (RAM) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত ল্যাপটপের অস্থায়ী মেমোরি, যা কম্পিউটারের ডাটা প্রসেসিং গতিকে প্রভাবিত করে। তাই ল্যাপটপ কেনার আগে র‍্যামের সঠিক পরিমাণ ও ধরন নির্বাচন করা জরুরি। যদি আপনি সাধারণ ব্রাউজিং, মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহার বা মুভি দেখার মতো সাধারণ কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৮GB র‍্যাম যথেষ্ট। তবে, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, গেমিং বা ভারী সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য ১৬GB বা তার বেশি র‍্যাম থাকা উচিত। 

র‍্যামের ধরনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে DDR4 এবং DDR5 র‍্যাম বাজারে পাওয়া যায়। DDR5 র‍্যাম বেশি দ্রুতগতির হলেও, এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। সাধারণ ব্যবহারের জন্য DDR4 যথেষ্ট হলেও, ভবিষ্যতের আপগ্রেড বিবেচনায় DDR5 বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে। র‍্যামের বাস স্পিড (MHz) বেশি হলে পারফরম্যান্সও ভালো হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩২০০MHz বা তার বেশি স্পিডের র‍্যাম ব্যবহার করলে মাল্টিটাস্কিং সহজ হয় এবং সফটওয়্যার দ্রুত কাজ করে।  আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ল্যাপটপে র‍্যাম আপগ্রেড করা যাবে কিনা।

কিছু ল্যাপটপে র‍্যাম সোল্ডারড থাকে, অর্থাৎ সেটি পরিবর্তন বা বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী র‍্যাম বাড়ানো যাবে কি না, তা কেনার আগে যাচাই করা উচিত।  যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান, তাহলে অন্তত ১৬GB র‍্যামের মডেল কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের সাথে সাথে বেশি র‍্যামের প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক র‍্যামের নির্বাচন করলে ল্যাপটপের গতি ও পারফরম্যান্স দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।

কোনটি দেখে ল্যাপটপ কিনবেন স্টোরেজ HDD নাকি SSD

ল্যাপটপ কেনার সময় স্টোরেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ডাটা সংরক্ষণ ও পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রাখে। সাধারণত দুটি ধরনের স্টোরেজ পাওয়া যায়: হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (HDD) এবং সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD)। কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে, তা নির্ভর করে প্রয়োজন ও বাজেটের ওপর।HDD হলো প্রচলিত স্টোরেজ, যেখানে ডাটা সংরক্ষণ করতে ঘূর্ণায়মান ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং বেশি স্টোরেজ সুবিধা দেয়। যদি আপনি অনেক বেশি ফাইল সংরক্ষণ করতে চান এবং বাজেট কম হয়, তাহলে ১TB বা ২TB HDD যুক্ত ল্যাপটপ বেছে নিতে পারেন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ হোয়াটস অ্যাপ ওয়েব এবং ডেস্কটপ অ্যাপ মেসেঞ্জার রুম ইন্টিগ্রেশন- সম্পর্কে বিস্তারিত

তবে, এর গতি তুলনামূলক ধীর এবং এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে যেতে পারে।অন্যদিকে, SSD হলো দ্রুতগতির স্টোরেজ, যা ফ্ল্যাশ মেমোরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি HDD-এর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি গতি প্রদান করে, ফলে ল্যাপটপ দ্রুত চালু হয়, সফটওয়্যার দ্রুত লোড হয় এবং মাল্টিটাস্কিং আরও সহজ হয়। SSD-এর আরেকটি সুবিধা হলো এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং কম তাপ উৎপন্ন করে, যা ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘায়িত করে।যদি আপনি দ্রুত কাজের জন্য ল্যাপটপ চান, যেমন ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং বা গেমিং, তাহলে SSD বেছে নেওয়া উত্তম।

ল্যাপটপ-কেনার-আগে-যেসব-বিষয়-মাথায়-রাখা-উচিত

২৫৬GB বা ৫১২GB SSD যুক্ত ল্যাপটপ হলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। তবে, SSD তুলনামূলক ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে বাজেটের কারণে বড় স্টোরেজের জন্য HDD পছন্দ করেন।অনেকে হাইব্রিড স্টোরেজও ব্যবহার করেন, যেখানে SSD এবং HDD দুটোই থাকে। এতে SSD-তে অপারেটিং সিস্টেম ও গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার ইনস্টল করে দ্রুত গতি পাওয়া যায়, আর HDD-তে বড় ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। যদি বাজেট পরিপূর্ণ থাকে তাহলে SSD যুক্ত ল্যাপটপ কেনাই ভালো সিদ্ধান্ত হবে, কারণ এটি ল্যাপটপের গতি ও দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।

ল্যাপটপ কেনার আগে ডিসপ্লে ও রেজোলিউশন জেনে নিন

ল্যাপটপ কেনার সময় ডিসপ্লে ও রেজোলিউশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি সরাসরি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও চোখের আরামের ওপর প্রভাব ফেলে। একটি ভালো ডিসপ্লে কাজের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারেও চোখের ক্লান্তি কমায়।প্রথমেই ডিসপ্লের আকার সম্পর্কে ভাবতে হবে। সাধারণত ১৩, ১৪, ও ১৫.৬ ইঞ্চির ল্যাপটপ বেশি জনপ্রিয়। যদি পোর্টেবল এবং হালকা ওজনের ল্যাপটপ চান, তাহলে ১৩ বা ১৪ ইঞ্চি ভালো হবে। কিন্তু যদি বড় স্ক্রিনে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাহলে ১৫.৬ ইঞ্চি বা তার বড় স্ক্রিন বেছে নেওয়া উত্তম।রেজোলিউশনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাধারণ ল্যাপটপে HD (1366×768) রেজোলিউশন থাকে, যা সাধারণ কাজের জন্য যথেষ্ট। তবে, যদি আপনি ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক ডিজাইন বা মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট নিয়ে কাজ করেন, তাহলে Full HD (1920×1080) বা 4K (3840×2160) রেজোলিউশন বেছে নেওয়া ভালো। উচ্চ রেজোলিউশন স্ক্রিনে ছবি ও টেক্সট আরও স্পষ্ট দেখা যায়।ডিসপ্লের ধরণও বিবেচনা করতে হবে। IPS প্যানেল যুক্ত ডিসপ্লে হলে রঙ আরও প্রাণবন্ত হয় এবং যেকোনো অ্যাঙ্গেল থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। যারা ফটো এডিটিং বা ডিজাইনিংয়ের কাজ করেন, তাদের জন্য IPS ডিসপ্লে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, যারা গেমিং করেন, তারা উচ্চ রিফ্রেশ রেট (120Hz বা 144Hz) ডিসপ্লে নিতে পারেন, যা স্ক্রিন টিয়ারিং ও ল্যাগ কমায়।এছাড়া, ডিসপ্লে ম্যাট বা গ্লসি হবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। গ্লসি ডিসপ্লে উজ্জ্বল ও রঙ আরও চমৎকার দেখায়, তবে এটি রিফ্লেকশন বেশি করে। ম্যাট ডিসপ্লে চোখের আরামের জন্য ভালো এবং দীর্ঘ সময় কাজের জন্য উপযুক্ত।ল্যাপটপ কেনার আগে ডিসপ্লে ও রেজোলিউশন যাচাই করে নেওয়া উচিত, যাতে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

ল্যাপটপ কেনার আগে ব্যাটারি ব্যাকআপ জেনে নিন

ল্যাপটপ কেনার সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।বিশেষত যারা বাইরে কাজ করেন বা দীর্ঘ সময় ল্যাপটপ ব্যবহার করেন। ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকলে বারবার চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা ব্যবহারকারীর জন্য ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে।সাধারণত ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ ৩ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে হয়ে থাকে। যা মূলত ব্যাটারির ক্ষমতা (mAh বা Wh) ও প্রসেসরের পাওয়ার অপটিমাইজেশনের ওপর নির্ভর করে। অফিস ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য অন্তত ৬-৮ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ থাকা উচিত। 

তবে যদি আপনি ট্রাভেল করেন বা বাইরে বেশি সময় ল্যাপটপ ব্যবহার করেন।তাহলে ১০-১২ ঘণ্টার ব্যাকআপযুক্ত ল্যাপটপ কেনাই ভালো।প্রসেসর ও অপারেটিং সিস্টেমের পাওয়ার ম্যানেজমেন্টও ব্যাটারির স্থায়িত্বের ওপর প্রভাব ফেলে। Intel-এর U-সিরিজ বা AMD-এর Ryzen ৭০০০U সিরিজের প্রসেসর কম বিদ্যুৎ খরচ করে, ফলে ব্যাটারি বেশি সময় ধরে চলে।ডিসপ্লের ধরণও ব্যাটারি ব্যাকআপকে প্রভাবিত করে। উচ্চ রেজোলিউশনের 4K ডিসপ্লে বেশি ব্যাটারি খরচ করে, তাই ব্যাটারি ব্যাকআপ দরকার হলে Full HD (1920×1080) ডিসপ্লে বেছে নেওয়া ভালো।

এছাড়া, উজ্জ্বলতা (Brightness) কমিয়ে রাখলে ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ধরে টিকে।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফাস্ট চার্জিং সুবিধা। অনেক আধুনিক ল্যাপটপে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি রয়েছে, যা ৩০-৪৫ মিনিটে ৫০-৬০% পর্যন্ত চার্জ করতে পারে। যারা ব্যস্ত জীবনে দ্রুত চার্জিং চান, তাদের জন্য এটি দারুণ সুবিধা। ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশি দরকার হলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি এবং পাওয়ার-অপটিমাইজড হার্ডওয়্যারযুক্ত ল্যাপটপ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ ল্যাপটপের ব্যবহার আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে।

ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ড দরকার কিনা

ল্যাপটপ কেনার সময় গ্রাফিক্স কার্ড (GPU) দরকার হবে কিনা, তা নির্ভর করে আপনি কী কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন। সাধারণ অফিসের কাজ, ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা বা হালকা মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য আলাদা গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের কাজের জন্য ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স (যেমন Intel UHD, Intel Iris Xe, বা AMD Radeon Vega) যথেষ্ট। তবে, যদি আপনি ভিডিও এডিটিং, 3D মডেলিং, গ্রাফিক ডিজাইন, গেমিং বা উচ্চ পারফরম্যান্স প্রয়োজন এমন কোনো কাজ করেন, তাহলে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড থাকা জরুরি।

 NVIDIA এবং AMD হলো জনপ্রিয় গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। NVIDIA GeForce RTX বা GTX সিরিজ এবং AMD Radeon RX সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড গেমিং ও ক্রিয়েটিভ কাজে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।গেমিংয়ের জন্য NVIDIA RTX 3050, 3060, বা 4060 এর মতো গ্রাফিক্স কার্ড বেছে নেওয়া ভালো, কারণ এগুলো হাই রেজোলিউশনের গেম সাপোর্ট করে এবং ফ্রেম রেট উন্নত করে। ভিডিও এডিটিং বা 3D মডেলিংয়ের জন্য RTX 3070 বা 3080-এর মতো শক্তিশালী GPU ভালো হবে।ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ তুলনামূলকভাবে বেশি দামি এবং বেশি ব্যাটারি খরচ করে। 

তাই যদি আপনার কাজ শুধুমাত্র সাধারণ অফিস ও অনলাইন কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে আলাদা GPU-এর প্রয়োজন নেই। তবে, ভবিষ্যতে গ্রাফিক্স-নির্ভর কাজের প্রয়োজন হতে পারে, সে ক্ষেত্রে মাঝারি মানের একটি GPU বেছে নেওয়া ভালো হতে পারে। আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। যদি হাই-পারফরম্যান্স ল্যাপটপ প্রয়োজন হয়, তাহলে ভালো গ্রাফিক্স কার্ডসহ ল্যাপটপ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায়, ইন্টিগ্রেটেড GPU যুক্ত ল্যাপটপই যথেষ্ট হবে।

পোর্ট এবং কানেক্টিভিটি ল্যাপটপ কেনার আগে জেনে নিন

ল্যাপটপ কেনার সময় পোর্ট এবং কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি বিভিন্ন ডিভাইস সংযোগ ও ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা দেয়। যদি ল্যাপটপে প্রয়োজনীয় পোর্ট না থাকে, তাহলে বাড়তি অ্যাডাপ্টার বা ডকিং স্টেশনের প্রয়োজন হতে পারে, যা বেশ ঝামেলাপূর্ণ।সর্বপ্রথম, ল্যাপটপে কতগুলো এবং কী ধরনের USB পোর্ট রয়েছে, তা দেখা উচিত। USB 3.0 বা USB 3.2 পোর্ট থাকলে দ্রুত ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। এছাড়া, নতুন মডেলের ল্যাপটপে USB Type-C বা Thunderbolt 4 পোর্ট থাকে, যা ডাটা ট্রান্সফারের পাশাপাশি চার্জিং ও ডিসপ্লে সংযোগের কাজেও ব্যবহার করা যায়।

HDMI পোর্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যদি আপনি ল্যাপটপটিকে একটি বড় স্ক্রিন বা প্রজেক্টরের সাথে সংযুক্ত করতে চান। কিছু ল্যাপটপে Mini HDMI বা DisplayPort থাকে, যা উচ্চ রেজোলিউশনের মনিটরের জন্য ভালো। অডিও জ্যাক থাকা দরকার, যদি আপনি হেডফোন বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে চান। অনেক আধুনিক ল্যাপটপে ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক থাকে না, তাই যদি এটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। SD বা MicroSD কার্ড রিডার থাকলে আলাদা অ্যাডাপ্টার ছাড়াই ক্যামেরা বা অন্যান্য ডিভাইস থেকে সহজে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়।

ল্যাপটপ-কেনার-আগে-যেসব-বিষয়-মাথায়-রাখা-উচিত

এছাড়া, ল্যাপটপে RJ-45 ইথারনেট পোর্ট থাকলে তারযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা সম্ভব হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে ওয়াইফাই-এর চেয়ে স্থিতিশীল। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে, ল্যাপটপে Wi-Fi 6 এবং Bluetooth 5.0 বা তার বেশি ভার্সন থাকা ভালো, কারণ এগুলো দ্রুত গতির ইন্টারনেট ও ডিভাইস সংযোগ নিশ্চিত করে। কিছু ল্যাপটপে 5G বা LTE সিম সাপোর্টও থাকে, যা বাইরে থাকাকালীন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপের পোর্ট ও কানেক্টিভিটি চেক করে কেনার সিদ্ধান্ত নিন, যাতে ভবিষ্যতে বাড়তি অ্যাডাপ্টারের ঝামেলায় না পড়তে হয়।

ল্যাপটপ কেনার আগে ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি দেখে নিন

ল্যাপটপ কেনার সময় ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি ল্যাপটপের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও বিক্রয়োত্তর সেবার মান নিশ্চিত করে। ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ সাধারণত টেকসই হয় এবং উন্নত পারফরম্যান্স প্রদান করে।বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু ল্যাপটপ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে Dell, HP, Lenovo, Asus, Acer, Apple, এবং MSI। প্রতিটি ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে, যেমন Dell ও HP অফিস ব্যবহারের জন্য নির্ভরযোগ্য, Lenovo-এর ThinkPad সিরিজ ব্যবসার জন্য উপযোগী, Asus ও MSI গেমিং ল্যাপটপে দক্ষ, এবং Apple ম্যাকবুক সৃজনশীল কাজে জনপ্রিয়।

ল্যাপটপ কেনার আগে ওয়ারেন্টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সাধারণত ল্যাপটপে ১ থেকে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়, তবে কিছু ব্র্যান্ড এক্সটেন্ডেড ওয়ারেন্টির সুবিধাও দেয়। যেসব ল্যাপটপে আন্তর্জাতিক ওয়ারেন্টি রয়েছে, সেগুলো ভ্রমণের সময়ও সুবিধাজনক হতে পারে। এছাড়া, ওয়ারেন্টির শর্ত ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। কিছু ব্র্যান্ড হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ওপর সম্পূর্ণ ওয়ারেন্টি দেয়।

আবার কিছু ব্র্যান্ড কেবল নির্দিষ্ট অংশের ওয়ারেন্টি প্রদান করে। ব্যাটারি ও অ্যাডাপ্টারের ওয়ারেন্টি সাধারণত কম সময়ের জন্য দেওয়া হয়।তাই তা যাচাই করা উচিত। ল্যাপটপ কেনার আগে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড ও দীর্ঘমেয়াদী ওয়ারেন্টি নির্বাচন করলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে সহজেই সমাধান পাওয়া যায়, যা আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখবে।

লেখক এর শেষ কথাঃ ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত

ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে খুব সুন্দর ভাবে আলোচনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ল্যাপটপ কেনার আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। যাতে আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সেরা ডিভাইসটি বেছে নিতে পারেন। প্রসেসর, র‍্যাম, স্টোরেজ, ডিসপ্লে, ব্যাটারি ব্যাকআপ, গ্রাফিক্স কার্ড, পোর্ট ও কানেক্টিভিটি, ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টি সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করলে ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না।আপনার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ল্যাপটপ নির্বাচন করা জরুরি।

যদি সাধারণ অফিস কাজ বা শিক্ষার জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন হয়। তাহলে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্সসহ মাঝারি কনফিগারেশনের ল্যাপটপ যথেষ্ট। তবে গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা হাই-এন্ড গ্রাফিক্স কাজের জন্য শক্তিশালী প্রসেসর ও ডেডিকেটেড GPU দরকার।এছাড়া, ব্যাটারি ব্যাকআপ ও পোর্টের সংখ্যা যাচাই করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বহনযোগ্যতা ও সুবিধা নিশ্চিত হয়। ব্র্যান্ড ও ওয়ারেন্টির বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। কারণ এটি বিক্রয়োত্তর সেবার মান নির্ধারণ করে।

সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ল্যাপটপ কিনলে এটি দীর্ঘদিন ভালো পারফরম্যান্স দেবে এবং আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সহজ করে তুলবে। তাই ল্যাপটপ কেনার আগে ভালোভাবে গবেষণা করে চাহিদা অনুযায়ী বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ল্যাপটপ কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত সম্পূর্ণ আর্টিকেল ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কিউফুল ওয়েবসাইটতের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url